অন্তর্বর্তী সরকার
ছাত্র-জনতার স্বৈরাচারবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতদের পরিবারের সন্তানদের সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করেছে ।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ রবিবার জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর।
আদেশ বাস্তবায়নে স্কুল ও কলেজ অধ্যক্ষদের নির্দেশনা দিয়ে আদেশে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এ আহত বা শহীদ পরিবারের সদস্যদের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে।
আরো বলা হয়, এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু করা মুক্তিযোদ্ধা সনদ বা জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এ শহীদদের গেজেট যথাযথভাবে যাচাই করে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা
বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এ আহত বা শহীদ পরিবারের সদস্যদের আসন নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্র বা গেজেটের সত্যায়িত কপি আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে এবং ভর্তির সময় মূল কপি প্রদর্শন করতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা
বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এ আহত বা শহীদ পরিবারের সদস্যদের পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে ওই আসনে ভর্তি করতে হবে। কোনো অবস্থায় আসন শূন্য রাখা যাবে না।
মন্তব্য করুন
সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল
কোঅপারেশন অনকোলজির (এসএফও) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক
ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকায়
প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যুক্ত হন তিনি।
এ সময় তিনি সার্ক ফেডারেশন অব অনকোলজিস্টসের (এসএফও) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. এবিএমএফ
করিমের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগের অভিজ্ঞতার কথা
উল্লেখ করেন।
এ সময় নিজের ছোটভাই বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক,
সমালোচক ও খ্যাতনামা টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরকে স্মরণ করেন অধ্যাপক
ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভাইয়ের ক্যান্সার শনাক্ত ও চিকিৎসার সময় তাঁর পুরো পরিবারকে কী
ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল সেসব অভিজ্ঞতার কথা জানান তিনি। সেসময় ডা. করিম কীভাবে
তাঁর চিকিৎসায় সাহায্য করেছিলেন সে কথা উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ক্যানসার চিকিৎসায় যে প্রযুক্তিগত
সহায়তা প্রয়োজন, তা এখনো আমরা পাচ্ছি না। সার্ক যে ক্যান্সার চিকিৎসাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব
দিচ্ছে এটা অত্যন্ত জরুরি ও অনুপ্রেরণামূলক।
দক্ষিণ-এশিয়ার দেশগুলো সার্ককে সক্রিয়
করে তোলার মধ্য দিয়ে লাভবান হবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সার্ক আমার কাছে
বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণের পরপরই সার্ককে সক্রিয়
করার বিষয়ে বলেছি। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার কিছু ইস্যুর জন্য সার্ক সক্রিয় হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, আমি মনে করি, দুটি দেশের
মধ্যেকার সমস্যা অন্য দেশগুলোকে প্রভাবিত করা উচিত না। প্রতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার নেতারা
যদি সাক্ষাৎ করেন, একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন তাহলে গোটা বিশ্বের কাছে বার্তা যায় যে
আমরা একসঙ্গে আছি। এটা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে বিশ্বের কাছে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন
করবে এবং এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজকের কনফারেন্সের
মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে সার্ক সক্রিয় করতে আবারও আহ্বান জানান।
মন্তব্য করুন
মহান বিজয় দিবসে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস-হোর্তা সাভারের জাতীয় স্মৃতি সৌধে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। এ সময় পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ৫৪তম বিজয় দিবস উদযাপন করেন।
উভয় নেতা আজ সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ৫ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তাঁরা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এ সময় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম প্রর্দশন করে এবং বিউগলে করুণ সুর বেজে উঠে।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা এবং পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট সেখানে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
এ সময় উপদেষ্টা, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, মুক্তিযোদ্ধা, কূটনীতিক, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিজয় দিবস উপলক্ষে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
মন্তব্য করুন
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী আইন ও বিচার বিভাগের সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে বুধবার তাকে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এ বিভাগের চলতি দায়িত্ব পালনের ১০ দিনের মাথায় তিনি পূর্ণ দায়িত্ব পেলেন।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একই বিভাগে তিনি যুগ্ম সচিব (প্রশাসন-১) পদে ছিলেন। এর আগে চট্টগ্রাম থেকে তাকে ঢাকায় বদলি করে আনা হয়। তিনি ৮ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি দায়িত্বে ছিলেন।
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক এই রেজিস্ট্রার জেনারেলকে দেড় মাস আগে জেলা ও দায়রা জজ করে পাঠানো হয়েছিল চট্টগ্রামে। সরকার পরিবর্তনের পর গত ১৩ অগাস্ট তাকে আবার আইন মন্ত্রণালয়ে ফিরিয়ে আনা হয়। তখন এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বলে আলোচনা ছিল।
এ বিভাগের আগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারকে গত বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ওএসডি করা হয়েছিল।
বিভিন্ন জেলায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করা নতুন আইন সচিব গোলাম রব্বানী ২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৫ সালে তৈরি করা সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের পদটি রাষ্ট্রের পদমর্যাদাক্রম অনুযায়ী জ্যেষ্ঠ সচিবের সমপর্যায়ের। এর আগে তিনি ছিলেন হাই কোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার, যে পদটি মর্যাদার দিক দিয়ে সচিব পর্যায়ের।
আগের সরকার এ বছর ১ জুলাই তাকে রেজিস্টার জেনারেল পদ থেকে সরিয়ে চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে বদলি করে। ক্ষমতার পালাবদলের পর গত ১৩ অগাস্ট তাকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র গোলাম রব্বানী ১৯৯১ সালে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন। পরে জুডিশিয়াল সার্ভিসে নিয়োগ পেয়ে টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর ও ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জামালপুরের যুগ্ম জেলা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের আইন শাখায় দায়িত্ব পালন করা গোলাম রব্বানী ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর হাই কোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পান।
মন্তব্য করুন
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
তিনি আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, আজ দুপুর ১টায় শিশুটি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
মন্তব্য করুন
অন্তর্বর্তীকালীন
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের
মধ্য দিয়ে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশের মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশে খুবই
আন্তরিক।
এ
খাতের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের পাশাপাশি টেকসই শিল্পায়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসারে
বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড (বিএবি) ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ইতিবাচক ভূমিকা অব্যাহত রাখার
জন্য তিনি আহ্বান জানান।
প্রধান
উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস’ উপলক্ষে আজ দেয়া এক
বাণীতে এসব কথা বলেন।
প্রধান
উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস-২০২৫’
উদ্যাপন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষ্যে আমি বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড
(বিএবি) এর সকল অংশীজন এবং সহযোগী সংস্থাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। দিবসটির এবারের
প্রতিপাদ্য ‘অ্যাক্রেডিটেশন : ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের ক্ষমতায়ন (এসএমই)’, বর্তমান
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি।
ক্ষুদ্র
ও মাঝারি উদ্যোক্তারা বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমাদের মোট দেশজ উৎপাদনের একটি বৃহৎ অংশ এসএমই খাত থেকে আসে।
নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও এ খাতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসএমই খাতের
প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা, ক্রেতা ও ভোক্তার
পরিবর্তনশীল চাহিদা এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতার মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। এ সকল
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রয়োজন সম্মিলিত বৈশ্বিক উদ্যোগ।
তিনি
আরও বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন ব্যবস্থা জাতীয় গুণগতমান অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে পণ্য
ও সেবার সরবরাহ ব্যবস্থার সকল পর্যায়ে গুণগতমান নিশ্চিতকরণ, দক্ষ কারিগরি জনবল সৃষ্টি,
বাণিজ্যে কারিগরি বাধা অপসারণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করে এ
সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিএবি এ
লক্ষ্যে কাজ করে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ল্যাবরেটরি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সনদ প্রদানকারী
সংস্থা এবং পরিদর্শন সংস্থাসহ মোট ১৫৫টি সরকারি, বেসরকারি এবং বহুজাতিক সংস্থাকে আন্তর্জাতিক
মান অনুসারে অ্যাক্রেডিটেশন সনদ প্রদান করেছে।’
প্রধান
উপদেষ্টা ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস-২০২৫’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা
করছি।
মন্তব্য করুন
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস 'ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার সবকিছু ধ্বংস করে গেছে' - উল্লেখ করে বলেছেন, নির্বাচনের আগে আমাদের অর্থনীতি, শাসনব্যবস্থা, আমলাতন্ত্র ও বিচারব্যবস্থায় সর্বাত্মক সংস্কার করতে হবে।
একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) প্রকাশিত হয় সাক্ষাৎকারটি।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থা, সংবিধান এবং বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করেছে। জানুয়ারির মধ্যে ওই কমিশনগুলোর সুপারিশ হাতে পাওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ সংস্কার বাস্তবায়ন করার কথা জানান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। উপদেষ্টা বলেন, 'এই সংস্কার বাস্তবায়নে সময় লাগবে, কেননা ‘নতুন বাংলাদেশ’গড়তে আমরা একদম শূন্য থেকে শুরু করেছি। '
নির্বাচন ঠিক কখন হবে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছেন, ‘নির্বাচনের সময় নির্ভর করছে সংস্কার প্রক্রিয়ার ওপর। এর ফলাফলই সময় নির্ধারণ করে দেবে। ’
সাধারণ নির্বাচনে ড. ইউনূস প্রার্থী হবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘না, আমি রাজনীতিবিদ নই। আমি সব সময়ই রাজনীতি থেকে দূরে থেকেছি।’ রাষ্ট্রের যেসব ব্যক্তি নীতি-নৈতিকতা সমুন্নত রাখেন, নিয়মকানুন মেনে চলেন এবং নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত রাখেন তাদের নির্বাচনে দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করেন ড. ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, ‘হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে দেশের শাসনকাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে, আর গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করে তা পুনর্গঠনের সুবিশাল কর্মযজ্ঞ আমাদের ঘাড়ে এসে পড়েছে।'
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, ‘হাসিনার শাসনামলে গণতন্ত্রের রীতিনীতি একদম ধ্বংস হয়ে গেছে। টানা তিন মেয়াদে ভোটারবিহীন ভুয়া নির্বাচন মঞ্চস্থ করেছেন হাসিনা। আর তাতে তিনি নিজেকে এবং তার দলকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করেছেন। একজন ফ্যাসিবাদী শাসক হিসেবে এসব করেছেন হাসিনা।'
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, 'এ বছরের আগস্টে ছাত্র নেতৃত্বাধীন সরকারি চাকরিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে কয়েকশ শিক্ষার্থী নিহত হন। এরপরই শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন হাসিনার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। তিনি হেলিকপ্টারে চড়ে ভারতে পালিয়ে যান। অক্টোবরে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা এবং তার বেশ কয়েকজন সহযোগীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। ’
বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় হলে হাসিনার প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে ভারতকে অবহিত করা হবে বলে জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘বিচার শেষে তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায় এলে আমরা ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হাসিনাকে হস্তান্তরের অনুরোধ জানাব। এক্ষেত্রে উভয় দেশের স্বাক্ষরিত একটি আন্তর্জাতিক আইনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারত এ আইন মানে কাজ করতে বাধ্য হবে।’
কূটনীতিক ফ্রন্টে বাংলাদেশের ভারতের সঙ্গে শক্তিশালী ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত। এক্ষেত্রে ড. ইউনূস দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তাব করেছেন। ভারত ও পাকিস্তানের বৈরী সম্পর্কের ফলে সার্ক কার্যত নিষ্ক্রিয় রয়েছে। সার্কের লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর মতো নিজেদের মধ্যে চলাফেরার স্বাধীনতা, আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য উৎসাহিত করা। সার্কের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান জানান ড. ইউনূস।
এদিকে হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ভারত। তাদের দাবি বাংলাদেশে হিন্দুদের ঘরবাড়ি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে ‘হামলা’ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকাকে অবশ্যই হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে বলে জোর দিয়েছে দিল্লি। তবে ভারত সরকারের এসব ঢালাও বক্তব্য নাকচ করে দেন ড. ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, ‘সংখ্যালঘু ইস্যুতে যা বলা হচ্ছে তার বেশির ভাগই প্রোপাগান্ডা। ’ এগুলো সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বলা হচ্ছে না বলে পাল্টা অভিযোগ করেন ড. ইউনূস। তিনি ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশে এসে তদন্তসাপেক্ষে সঠিক তথ্য তুলে ধরার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা এসব অপ-তথ্যের বিরুদ্ধে ভারত সরকারকে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য কাজ করছি।
অন্য আঞ্চলিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইউনূস চীনকে 'আমাদের বন্ধু' বলে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, সড়ক ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ থেকে শুরু করে সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত তারা আমাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ বেইজিংয়ের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সংস্থা- আসিয়ানে বাংলাদেশের যোগ দেওয়ার বিষয়ে জোর দেন ড. ইউনূস। বাংলাদেশ আসিয়ানে যোগ দেয়াকে একটি প্রতিশ্রুতিশীল সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে চায়। কারণ বাংলাদেশ বিশেষ করে ২০২৬ সালে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে, এরপর বাংলাদেশ আর অগ্রাধিকারভিত্তিক শুল্ক সুবিধা পাবে না।
মালয়েশিয়া আগামী জানুয়ারি থেকে আসিয়ানের সভাপতি হতে যাচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ড. ইউনূস বলেন, তিনি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে বাংলাদেশের সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বাংলাদেশকে আসিয়ানে স্বাগত জানাতে তার সদিচ্ছার কথা ব্যক্ত করেছেন। তবে এক্ষেত্রে বেশ কিছু ধাপ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের আসিয়ানে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম ধাপটি হবে আসিয়ানের সংজ্ঞা সংশোধনে একটি সর্বসম্মত রেজোল্যুশন নিশ্চিত করা। এর আগে আমরা আসিয়ানের একটি সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হিসেবে স্বীকৃতি অর্জনের আশা করছি। আসিয়ানের সদস্য দেশগুলো বাংলাদেশের এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ড. ইউনূস।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তার দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বিপুল সংখ্যক রাষ্ট্রবিহীন ও নাগরিকত্বের প্রাধিকার-বঞ্চিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'এই দায় (রোহিঙ্গা) বাংলাদেশ কতদিন বহন করবে? রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আমাদের একটি সুস্পষ্ট গন্তব্য ও একটি অভিন্ন লক্ষ্য ঠিক করা দরকার। '
বাংলাদেশ মিয়ানমারে জাতিসংঘ-শাসিত একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, এতে করে এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা তাদের দেশেই আশ্রয়-শিবিরে থাকতে পারবে। সেখানকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে তাদের অন্য কোনো দেশে স্থানান্তর করার প্রয়োজন হবে না, তারা তাদের নিজেদের বাড়িঘরে ফিরে যেতে পারবে বলে উল্লেখ করেন মুহাম্মদ ইউনূস।
মন্তব্য করুন
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধনা প্রদান করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ শনিবার (২ নভেম্বর) সকাল ১১ টায় ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তিনি এ সংবর্ধনা প্রদান করেন।
এ সময় নারী ফুটবল দলের সদস্যরা তাঁদের স্বপ্ন ও খেলোয়াড় জীবনের প্রতিদিনের সংগ্রামের কথা প্রধান উপদেষ্টার সামনে তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা বিজয়ী খেলোয়াড়দের বিভিন্ন দাবি ও কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং অগ্রাধিকারভিত্তিতে সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন।
গত ৩০ অক্টোবর কাঠমান্ডুতে সপ্তম সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেপালকে ২-১ গোলে পরাজিত করে শিরোপ জিতে নেয় বাংলাদেশ দল।
নারী ফুটবলারদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই সাফল্যের জন্য আমি পুরো জাতির পক্ষ থেকে তোমাদেরকে অভিনন্দন জানাই। জাতি তোমাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমাদের দেশের মানুষ সাফল্য চায়, আর তোমরা সেই সাফল্য এনে দিয়েছ।
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি।
তিনি বলেন, অনেক বাধা পেরিয়ে আমরা এই পর্যায়ে পৌঁছেছি। শুধু নারী ফুটবল দলই নয়, বাংলাদেশের নারীদের সামগ্রিকভাবে নানা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
২০০৯ সালে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করা সাবিনা তাঁর আগের প্রজন্মের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, আগের প্রজন্ম
ফুটবলকে তাঁদের ভালবাসা হিসেবে বেছে নেওয়ার সাহস দেখিয়েছিলেন।
সাবিনা আরো বলেন, আমাদের অনেকে সাধারণ পরিবার থেকে এসেছে এবং তার পরিবারকে আর্থিকভাবে
সাহায্য করতে হয়।
তিনি বলেন, আমাদের বেতন খুব বেশি নয়। এই বেতন দিয়ে পরিবারকে তেমন কোন সাহায্য করতে পারি না।
এই তারকা স্ট্রাইকার তাঁর কয়েকজন সহযোদ্ধার সংগ্রামের গল্প, যেমন মারিয়া মান্দারের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
ময়মনসিংহের বিখ্যাত কলসিন্দুর গ্রামের মারিয়া, যেখান থেকে সাফ বিজয়ী দলের ছয়জন খেলোয়াড় এসেছেন, ছোটবেলায় তাঁর বাবাকে হারান এবং মা তাকে বড় করেন।
উইঙ্গার কৃষ্ণা রানী সরকার ঢাকায় তাঁদের আবাসন সমস্যার কথা উল্লেখ করেন, আর মিডফিল্ডার মানিকা চাকমা খাগড়াছড়ি জেলার দূরবর্তী লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার ফুটবলার হিসেবে উঠে আসার সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন।
মিডফিল্ডার স্বপ্না রানী তাঁর নিজ জেলা দিনাজপুরের রানীশংকৈল উপজেলায় তার গ্রামের দূর্বল অবকাঠামোর কথা বলেন।
উইঙ্গার কৃষ্ণা প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করেন যেন তাঁদের জন্য এশিয়ার বাইরে একটি প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করা হয়, বিশেষ করে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বিজয়ী বার্সেলোনার সঙ্গে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রত্যেক খেলোয়াড়কে তাদের ব্যক্তিগত আশা-আকাঙ্ক্ষা, সংগ্রাম ও তাদের বিভিন্ন দাবি আলাদাভাবে কাগজে লিখে তাঁর কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য বলেন।
অধ্যাপক ইউনুস বলেন, ‘তোমরা যা কিছু চাও তা লিখতে দ্বিধা করো না আমরা তোমাদের দাবিগুলো পূরণ করার চেষ্টা করব। যদি কিছু এখনই করা সম্ভব হয়, আমরা তা করব’।
কোচ পিটার বাটলার এবং ম্যানেজার মাহমুদা আক্তারও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া, সুপ্রদীপ চাকমা, অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং নূরজাহান বেগম।
মন্তব্য করুন
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত রাষ্ট্রদূতদের বাংলাদেশিদের জন্য তাদের ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে সরিয়ে ঢাকায় অথবা প্রতিবেশী অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের অনুরোধ জানান।
আজ সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের সঙ্গে এক বৈঠক প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা এই মিসইনফরমেশন ঠেকাতে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি।
১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্বে দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন।
প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে ১৫ জন প্রতিনিধি তাদের মতামত তুলে ধরেন। বৈঠকে শ্রম অধিকার, বাণিজ্য সুবিধা, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইবুনাল অ্যাক্ট, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাস্তবায়ন ও টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে উভয়ের অঙ্গীকার ও করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে বলেন, ডিসেম্বর মাসে গোটা মাসজুড়ে আমরা বিজয় উদযাপন করি। বিজয়ের মাসে আপনাদের সঙ্গে এমন একটি ইনট্যারক্টিভ আলোচনায় অংশ নিতে পেরে আমি খুব আনন্দিত।
বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন তিনি। এ সময় তিনি গত ১৬ বছর ধরে অত্যাচার, শোষণ, বলপূর্বক গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় সংক্ষেপে তুলে ধরেন। অধ্যাপক ইউনূস অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রের বিষয় উল্লেখ করে দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং ব্যাংকিং সিস্টেমকে কীভাবে বিপর্যস্ত করা হয়েছিল সে সব কথা জানান।
বাংলাদেশ সম্পর্কে ব্যাপক আকারে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা এই মিসইনফরমেশন ঠেকাতে
আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা যে ব্যাপক টাকা পাচার করে নিয়ে গেছে তা দিয়ে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি।
সম্প্রতি জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের কথা উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে ইইউ প্রতিনিধিদের বিশদভাবে জানান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত রাষ্ট্রদূতদের বাংলাদেশিদের জন্য তাদের ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে সরিয়ে ঢাকায় অথবা প্রতিবেশী অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করায় অনেক শিক্ষার্থী দিল্লি গিয়ে ইউরোপের ভিসা নিতে পারছেন না। ফলে তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশের শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। ভিসা অফিস ঢাকা অথবা প্রতিবেশী কোনো দেশে স্থানান্তর হলে বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ই উপকৃত হবে।’
বৈঠকে উপস্থিত পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, ইতোমধ্যে বুলগেরিয়া বাংলাদেশিদের জন্য তাদের ভিসা সেন্টার ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে স্থানান্তর করেছে। তিনি অন্য দেশগুলোকেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণের আহ্বান জানান।
সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে পূর্ণ সমর্থন জানান ইইউ প্রতিনিধিরা। বেশ কিছু পরামর্শ ও সুপারিশ তুলে ধরে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন তারা।
মন্তব্য করুন
মহান
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের
জন্ম শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে
তাজউদ্দীন পরিবার।
আজ
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন তাজউদ্দীনের
জ্যেষ্ঠ কন্যা শারমিন আহমদ এবং পুত্র তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ।
প্রধান
উপদেষ্টার প্রেস উইংএর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এ
সময় শারমিন আহমদের লেখা ‘তাজউদ্দীন আহমদ : নেতা ও পিতা’ বইয়ের একটি কপি প্রধান
উপদেষ্টাকে উপহার দেন।
মন্তব্য করুন
পিলখানা হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন-আয়নাঘর, শাপলা ম্যাসাকার এবং ভোট ডাকাতিসহ শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দুঃশাসনের সব গল্প ঐতিহাসিক তথ্য আকারে উপস্থাপন করা হবে জুলাই স্মৃতি জাদুঘরে।
আজ শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক বৈঠকে জাদুঘর নির্মাণ কর্তৃপক্ষ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে এ তথ্য জানান।
সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, ৩১ অক্টোবর ২০২৫ এর মধ্যে এ জাদুঘরের নির্মাণকাজ শেষ হবে এবং নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে উদ্বোধন সম্ভব হবে বলে তারা আশা করছেন।
তিনি বলেন, আমরা হাসিনার দুঃশাসনের চিত্রগুলো এই জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য কিউরেট করছি যাতে ১৬ বছরের ফ্যাসিজমের ইতিহাস জীবন্ত থাকে। জীবন্ত থাকে সরাসরি গণভবন থেকে আসা নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত সব অত্যাচারের এবং নৃশংসতার ইতিহাস।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস জাদুঘর নির্মাণ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং আশা প্রকাশ করেন এ জাদুঘরে যারা আসবেন তারা ৫ আগস্ট গণভবনে জনতার ঢলকে অনুভব করবেন।
‘মানুষের মধ্যে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলার এই অনুভব নিয়ে আসাটাই এই জাদুঘরের একটা বড় কাজ,’ বলেন তিনি।
জাদুঘর নির্মাণে আইসিটি প্রসিকিউশন টিম ও গুম বিষয়ক তদন্ত কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ চলছে বলে জানান জাদুঘরের চিফ কিউরেটর তানজীম ওয়াহাব।
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করছি এটি একটি ইউনিক জাদুঘর হবে। ১৬ বছরের দুঃশাসনের গল্পগুলো এই জাদুঘরে সিকোয়েন্স আকারে থাকবে। দর্শনার্থীরা জানতে পারবেন শেখ হাসিনা কীভাবে দেশ চালাতেন। ’
সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘গুম-খুনের নির্দেশ দেওয়া অনেক অডিও ইতোমধ্যেই জাদুঘর কর্তৃপক্ষের হাতে এসেছে। এই অডিওগুলো জাদুঘরে রাখা হচ্ছে। শেখ হাসিনা কীভাবে গুমের শিকার পরিবারগুলোকে ডেকে এনে মিথ্যা সান্ত্বনা দিতো সে চিত্রও উঠে আসবে। ’
এ ছাড়াও জাদুঘরে একটা স্ক্রিনিং সেন্টার থাকবে যেখানে জুলাই ও ১৬ বছরের দুঃশাসন নিয়ে ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির সদস্য ড. নাবিলা ইদ্রিস, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের গভর্নিং বডির চেয়ারপারসন মেরিনা তাবাসসুম। জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের গবেষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড্যানিয়েল আফজালুর রহমান, কবি হাসান রোবায়েত, মালিহা নামলাহা, জাদুঘরের শিল্পী তেজশ হালদার জশ, মোসফিকুর রহমান জোহান, জাদুঘরের স্থপতি সালাউদ্দিন আহমেদ এবং সমন্বয়কারী হাসান এনাম।
মন্তব্য করুন